ঢাকা , সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫ , ২৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
এপ্রিলে এলপিজির দাম অপরিবর্তিত থাকছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেনের দাবি মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে ডেঙ্গুর তীব্র ঢেউয়ের শঙ্কাতেও প্রতিরোধ প্রস্তুতিতে নজর নেই ঈদ উপলক্ষে অর্ধেকের বেশি গার্মেন্ট কারখানা এখনও বন্ধ এবার বায়ুদূষণে শীর্ষে কাঠমান্ডু স্থানীয় সরকার সচিবকে জনপ্রশাসনে সংযুক্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিকের হুমকি, নিরাপত্তা চেয়ে স্বামীর সংবাদ সম্মেলন সাটুরিয়ার বালিয়াটি জমিদার বাড়ি দেখতে উপচেপড়া ভিড়, রাজস্ব আয় ৫ লাখ চাটমোহরের হান্ডিয়ালে জমি জবরদখলের অভিযোগ বরিশালে কল্যাণ কেন্দ্রের কল্যাণে জন্ম নিয়েছে ১১৩ নবজাতক কিশোরগঞ্জের হাওরে ধান কাটা শুরু বাংলাদেশসহ ১৩ দেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা সৌদির ভূমিকম্পকে ব্যবহার করে মিয়ানমার জান্তার ত্রাণ নিয়ে কারসাজি যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পবিরোধী সর্ববৃহৎ সমাবেশ শুল্ক ঘোষণার পর জেপি মরগানের পূর্বাভাস ভারতে ৭০ বাংলাদেশি পর্যটক নিয়ে বাস উল্টে নিহত ১ রাফাহ শহরকে গাজা থেকে বিচ্ছিন্ন করল ইসরাইল ব্যাটারের কাছাকাছি উদ্যাপনে পাওয়া শাস্তির ডাবল পেলেন দূরে করে
বাজেট ২০২৫-২৬

মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে বিনিয়োগ বাড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ

  • আপলোড সময় : ০৬-০৪-২০২৫ ০২:২৭:১৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-০৪-২০২৫ ০২:২৭:১৫ অপরাহ্ন
মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে বিনিয়োগ বাড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ
মূল্যস্ফীতির উত্তাপ এখনো কমেনি। স্থবির বিনিয়োগ। বাড়ছে না কর্মসংস্থান। রাজস্ব আদায়ও হচ্ছে না প্রত্যাশিত মাত্রায়। তবে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রেমিট্যান্সের প্রবাহ ভালো। সামষ্টিক অর্থনীতির নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানো ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, নতুন অর্থবছরের বাজেটে মূল গুরুত্ব দিতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর। একই সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনিয়োগ না বাড়লে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান হবে না। আর কর্মসংস্থান না হলে নানামুখী সমস্যা দেখা দেবে। মূল্যস্ফীতি কমানো ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপের পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে। তবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নির্বাচিত সরকার না থাকায় বিনিয়োগ বাড়ানো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা জানুয়ারি মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। অবশ্য তারপরও মূল্যস্ফীতি প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বড় ধরনের চাপ রয়েছে। মূল্যস্ফীতি চাপের পাশাপাশি সরকার প্রত্যাশিত রাজস্ব পাচ্ছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। অবশ্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও আগের বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই লাখ ২১ হাজার ৮১৭ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয় দুই লাখ ১৭ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বেড়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়ার পাশাপাশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে রফতানি আয়ে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে পণ্য রফতানি থেকে আয় এসেছে ৩৯৭ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে পণ্য রফতানি আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি হয়েছে। এ সময়ে তিন হাজার ২৯৪ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য রফতানি আয় ছিল দুই হাজার ৯৮১ কোটি ডলার। ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ বেশ বেড়েছে। চলতি মাসের প্রথম ২৬ দিনেই রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় তিন বিলিয়ন (২৯৫ কোটি ডলার) ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ ২৬৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিও বেড়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি এলসি খোলা হয়েছে ৬ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের (ফেব্রুয়ারি-২০২৪) তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ (১৯.৯২ শতাংশ) বেশি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের আমদানি এলসি খোলা হয়েছিল। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থনীতির এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল গুরুত্ব কোথায় দেয়া উচিত জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে এখন বেশ কিছু সামষ্টিক অর্থনীতি চ্যালেঞ্জ আছে। সেই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে অ্যাড্রেস করা যায় সেগুলোর বিষয়ে বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে। এর মধ্যে প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। এখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ধারে কাছে। এই মূল্যস্ফীতির লাগাম কীভাবে টেনে ধরা যায়, সে ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে।’ ‘আরেকটা চ্যালেঞ্জ হলো বিনিয়োগ। দেশে তো বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগ ছাড়া গ্রোথ হয় না। গ্রোথ ছাড়া কর্মসংস্থান হয় না। কর্মসংস্থান না হলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। বেসরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণের মাত্রা বেড়ে গেছে। এগুলো তো বিনিয়োগবান্ধব পরিস্থিতি নয়। বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে বাজেটে গুরুত্ব দেয়া উচিত।’ বলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ অর্থ উপদেষ্টা। আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিনিয়োগ না হওয়ার জন্য অবকাঠামোগত সমস্যা আছে। বিজনেস ইন্ডিকেটরগুলো আমাদের খারাপ। গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা আছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সমস্যা আছে। ব্যবসায়ীরা গ্যাস ঠিকমতো পাচ্ছেন না।’ আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিশেষ নজর দেয়া উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা হলো বরাদ্দ দেয়া উচিত, আর একটা হলো এটা ঠিকমতো বিতরণ হয় কী না সেটাও দেখতে হবে। যারা পাওয়ার কথা তারা ঠিকমতো পায় না, আবার যাদের পাওয়ার কথা না তারা পায়। এ বিষয়গুলো দেখতে হবে। যারা প্রকৃতপক্ষে পাওয়ার যোগ্য তাদের পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’ আগামী বাজেটে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, ‘দু’টি সমস্যায় সমগ্র জাতি কষ্ট ভোগ করছে। একটা হলো-মূল্যস্ফীতি, আরেকটা প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না, বিনিয়োগ হচ্ছে না এবং কর্মসংস্থান বাড়ছে না। মূল্যস্ফীতি অনেক ওপরে উঠে এখন একটু কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনো যে পর্যায়ে আছে সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষের পক্ষে কিনে খাওয়া কঠিন। আর রোজার পর কী দাঁড়ায়, সেটাও অনিশ্চিত। যেহেতু সবজির মৌসুম ছিল, সে কারণে দাম কম ছিল। কিন্তু চালের দাম কমেনি। তার মানে মূল্যস্ফীতির সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে, এ রকম ভাবা ঠিক নয়। এটাকে মোকাবিলা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করার জন্য যেসব পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে গ্যাপ আছে, মানে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি, সেসব পণ্য আমদানি করে হোক বা অন্য কোনোভাবে সংগ্রহ করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো প্রয়োজনীয় মাত্রায় বাজারে যা সরবরাহ হবে তার এক তৃতীয়াংশ সরকারের গুদামে মজুত রাখতে হবে। যাতে দাম বাড়লে সরকার সেটা বাজারে ছেড়ে দাম কমাতে পারে। আর দাম কমে গেলে সরকার উৎপাদকের কাছ থেকে কিনে নেবে।’ ১৯৯০ সালে মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে যে টাস্কফোর্স হয়েছিল, এই সুপারিশটা তারাই করেছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সরকার এটা গ্রহণ করেনি। এই সরকার বলছে বাজেটে তারা একটা ‘পদচিহ্ন’ রেখে যেতে চায়। যদি রাখতে চায় এই কর্মসূচিটা চালু করে দিয়ে রাখতে পারে। বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এ অধ্যাপক। তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ান/ইলেভেনের সময় আজিজুল ইসলাম সাহেব (এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম) একটা প্রোগ্রাম করেছিলেন ১০০ দিনের গ্যারান্টি কর্মংস্থান। তখন এটা করা হয়েছিল গ্রামে। বর্তমান সরকার এটা গ্রাম ও শহরে করতে পারে। হালকা মৌসুমে সরকার ১০০ দিনের কাজের ব্যবস্থা করবে, এতে অবকাঠামের কাজ হলো এবং তার অন্য জায়গায় চাকরি না হলেও অন্তত তিন মাসের জন্য এখানে কাজের সুযোগ পেলো। নগর ও গ্রামের মানুষের জন্য এটা করা যেতে পারে। এটা করা গেলে, এটাও একটা পদচিহ্ন হতে পারে।’ আরেকটা করা যেতে পারে মোবাইলের মাধ্যমে গরিব মানুষকে নগদ অর্থ দেয়া। করোনার সময় যেমন দেড় কোটি মানুষকে দেয়া হয়েছিল। এগুলো বাজেটে থাকা উচিত- বলেন এম এম আকাশ। রাজস্ব আহরণ আরেকটা চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার সুপারিশ যাদের দু’টির বেশি বাড়ি আছে, যাদের দু’টির বেশি গাড়ি আছে এবং যাদের ব্যাংকে ক্যাশ ডিপোজিট এক কোটি টাকার বেশি তাদের সহজে চিহ্নিত করা যায় এবং চিহ্নিত করলে তাদের ওপর ডাইরেক্ট (প্রত্যক্ষ) একটা সাপ্লিমেন্টারি ট্যাক্স (সম্পূরক শুল্ক) বসানো যায়। এমনিতেই তাদের ওপর ট্যাক্স আছে। কিন্তু অনেকেই ট্যাক্স দিচ্ছে না। সুতরাং যারা ট্য্যাক্স দিচ্ছে না, তাদের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। এভাবে সম্পদ ট্যাক্স আদায় করতে পারলে প্রত্যক্ষ করের আওতা বাড়বে এবং পরোক্ষ করের আওতা কমবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স